একজন পাঠক প্রশ্ন করেছেন যে, তারা ভ্যাট আইনের বিধান অনুসারে পণ্যের ঘোষণা (মূসক-৪.৩) দাখিল করে এবং ভ্যাট পরিশোধ করে পণ্য বিক্রি করে। তবে, তাদের বিক্রয় কৌশল হিসেবে ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য পণ্যের গায়ে লিখে রাখে।
কাস্টমারকে ডিসকাউন্ট দিয়ে তারা ঘোষিত মূল্যেই পণ্য বিক্রি করে। সম্প্রতি ভ্যাট অফিস থেকে বলা হয়েছে যে, পণ্যের গায়ে লেখা মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এই বিষয়টা কিভাবে সমাধান করা যেতে পারে?
ভ্যাট আইন অনুসারে পণ্যের ঘোষণা (মূসক-৪.৩) দাখিল করতে হয়। মূসক-৪.৩ ফরমে প্রতিটা উপকরণ ব্যবহারের পরিমাণ, মূল্য, মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ করতে হয়। ঘোষিত মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট পরিশোধ করে ঘোষিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হয়।
তবে, বিক্রয় মূল্য ৭.৫% হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়। বিক্রয় মূল্য ৭.৫% এর চেয়ে বেশি হ্রাস-বৃদ্ধি হলে পুনরায় ঘোষণা প্রদান করতে হয়। ভ্যাট বিভাগের কাছে মূসক-৪.৩ ফরমে যে ঘোষণা দাখিল করা হয়, সে মূল্য পণ্যের গায়ে লিখে রাখার কোনো বিধান নেই।
পণ্যের গায়ে যে খুচরা মূল্য এবং উপাদান লেখা থাকে সেটা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন এবং বিএসটিআই রুলস অনুসারে লেখা থাকে বলে জানি। শুধুমাত্র ৪টি পণ্যের ক্ষেত্রে এনবিআর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে যা পণ্যের গায়ে লেখা থাকতে হয়। সে ৪টি পণ্য হলো বিড়ি, সিগারেট, জর্দা ও গুল।
এই ৪টি পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্য যদি যথাযথভাবে ঘোষণা (মূসক-৪.৩) দাখিল করে, সে মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট পরিশোধ করে বিক্রি করা হয়, তাহলে ভ্যাট আইনের লংঘন হয় না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন এবং বিএসটিআই রুলস অনুসারে পণ্যের গায়ে মূল্য লেখার যে বিধান রয়েছে তা মেনে চলতে হবে।
তবে, আমি সাধারণ জ্ঞানে যা বুঝি সেটা হলো সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের অর্থ হলো, এই মূল্যে বা এর চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করা যাবে। এর চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করা যাবে না।
তাই, আপনি যেহেতু পণ্যের গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করছেন, সেহেতু কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ভ্যাট আইনের ধারা ২ এর উপ-ধারা (৫৯) অনুসারে, ডিসকাউন্ট বাদ দিয়ে যে মূল্য থাকবে সে মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।
ভ্যাট অফিসের দায়িত্ব হলো, প্রকৃত বিক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট আদায় করা। ঘোষণা যথাযথ আছে কিনা সেটা ভ্যাট অফিস যাচাই করতে পারে। আপনার বর্ণনামতে যে কারণে আপনি পণ্যের গায়ে বেশি মূল্য লিখেছেন সে কারণ যদি সঠিক হয়ে থাকে এবং তা যদি ভ্যাট অফিস বুঝতে পারে, তাহলে পণ্যের গায়ে লিখিত মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট প্রদান করতে বলা সমীচীন নয়।
পণ্যের গায়ে বেশি মূল্য লেখা দেখে ভ্যাট অফিসার মনে করতে পারেন যে, পণ্য হয়তো বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। তাঁকে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে কনভিন্স করার দায়িত্ব আপনার।
যাহোক, আপনার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হলো, আপনার বর্ণিত পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন এবং বিএসটিআই রুলস অনুসারে যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে ভ্যাট আইন অনুসারে এরূপ প্র্যাকটিসে কোনো সমস্যা নেই।
DR. MD. ABDUR ROUF is a VAT Specialist and Trainer. He has about 27 years experience in the VAT management of Bangladesh. He is a regular trainer of International VAT Training Institute and Bangladesh VAT Professionals Forum (VAT Forum).
এখানে উল্লেখিত কোনো কিছু যদি সরকারের ইস্যূকৃত আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ এর সাথে সাংঘর্ষিক হয়, সেই ক্ষেত্রে উক্ত ইস্যূকৃত আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ-ই প্রাধান্য পাবে।