অতিরিক্ত পরিশোধিত ভ্যাট সমন্বয় করার পদ্ধতি

মাঝে মাঝে এমন হয় যে, ভুলক্রমে ভ্যাট অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়ে যায়। যারা এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান জানেন না তারা এরূপ পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারা কারো কারো সাথে আলোচনা করেন বা ভ্যাট অফিসে আবেদন করেন, তবে, সহসা সমাধান পান না।

আমার এক ছাত্র একবার ভুলক্রমে অতিরিক্ত ভ্যাট পরিশোধ করে ফেলেছিলেন। তারপর অনেক দৌঁড়া-দৌঁড়ির পর আমার কাছে এলেন। তাঁকে আমি সহজ বিধান বুঝিয়ে দিলাম। তিনি মহা খুশি। এর আগে তাঁর চাকুরি হারানোর উপক্রম হয়েছিল। এই বিধান নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো, ইন-শা-আল্লাহ্।

ভ্যাট আইনের ধারা ২ এর উপ-ধারা (১০৩) এর দফা (জ) হলো, “পূর্ববর্তী কর মেয়াদে অতিরিক্ত পরিশোধিত মূসক হ্রাসকারী সমন্বয়”। আইনের ধারা ৭২ এ উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তি যদি কোনো কর মেয়াদে অতিরিক্ত কর পরিশোধ করেন, তাহলে নির্ধারিত সময়সীমা, শর্ত ও পদ্ধতিতে উক্ত অর্থ ফেরত গ্রহণের জন্য আবেদন করা যাবে বা পরবর্তী দাখিলপত্রে হ্রাসকারী সমন্বয় করা যাবে।

ভ্যাট বিধিমালার বিধি ৫২(৬) এ উল্লেখ রয়েছে যে, কোনো নিবন্ধিত ব্যক্তি তার অতিরিক্ত পরিশোধিত কর পরিশোধ পরবর্তী ৬ (ছয়) কর মেয়াদের মধ্যে দাখিলপত্রে হ্রাসকারী সমন্বয় করতে পারবেন। এসব বিধি-বিধানের অর্থ হলো, যদি কোনো কারণে কর (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, টার্নওভার কর, জরিমানা, সুদ) অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়, তাহলে পরবর্তী ৬ কর মেয়াদের মধ্যে দাখিলপত্রে করদাতা নিজে নিজেই হ্রাসকারী সমন্বয় করতে পারবেন। এজন্য কোথাও আবেদন করতে হবে না বা কারোর অনুমতির প্রয়োজন হবে না।

কিন্তু এ বিধানগুলো কারো কারোর জানা নেই। যারা ভ্যাটের সাথে কাজ করেন, তারাও মাঝে মাঝে দেখা যায় যে, এই বিধান জানেন না।
নতুন ভ্যাট আইনের ভূমিকায় উল্লেখ রয়েছে যে, মূলত ৪টি উদ্দেশ্যে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। (১) করের ক্ষেত্র বিস্তৃত করা; (২) কর আদায় প্রক্রিয়া সহজ করা; (৩) বিধি-বিধান সুসংহত করা; এবং (৪) প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিধি-বিধান প্রণয়ন করা।

অর্থাৎ বিধি-বিধান সুসংহত করা নতুন ভ্যাট আইনের একটা উদ্দেশ্য ছিল। সুসংহত করার অর্থ কি? আমি বুঝি যে, ইনটিগ্রেটেড করা, অর্থাৎ একস্থানে নিয়ে আসা। অতিরিক্ত পরিশোধ করা কর হ্রাসকরী সমন্বয় করা যাবে এ সংক্রান্ত সামগ্রিক বিধান আইন ও বিধার ৩ স্থানে উল্লেখ রয়েছে। তাই, তা পাঠকদের পক্ষে বোঝা সহজ হয় না। ভ্যাট আইনে এমন আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে।

স্মার্ট আইন এমন হওয়া দরকার যে, কোনো বিধান একস্থানে পাওয়া যাবে। বারংবার ক্রস-রেফারেন্স দেখতে হবে না। কোনো বিষয়ের সামগ্রিক বিধান একস্থানে সন্নিবেশ করা হলে পাঠক তা সহজে পড়তে পারবেন, বুঝতে পারবেন, পালন করতে পারবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করতে হলে স্মার্ট ভ্যাট সিস্টেম স্থাপন করতে হবে।

স্মার্ট ভ্যাট সিস্টেম স্থাপন করতে হবল স্মার্ট ভ্যাট আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন স্মার্ট হতে হলে কোনো বিষয়ের সব বিধান একস্থানে সহজ ভাষায় সন্নিবেশ করতে হবে। আশা করি, আপনারা আমার সাথে দ্বীমত পোষণ করবেন না। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে, ভ্যাট ব্যবস্থা সংস্কারে আমাদের কি করা দরকার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top