এসআরও নং-১৩৬-আইন/২০২৩/২১৩-মূসক অনুসারে, নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত ব্যবসার শো-রুমের ভাড়া ভ্যাটমুক্ত। এ বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন আসে যে, যদি নারী উদ্যোক্তা পার্টনার হন, অর্থাৎ নারী উদ্যোক্তার অংশ ধরুন ৪০%, ৫০% বা ৬০% হয়, তখন কি হবে?
আরো প্রশ্ন হলো, ব্যবসার শো-রুম বলতে কি বোঝায়? নারী উদ্যোক্তা সেবা প্রদানকারী হলে এই সুবিধা পাবেন কিনা। উল্লেখ্য, ভ্যাট ব্যবস্থায় মূলত উৎপাদনকারী, ট্রেডার এবং সেবা প্রদানকারী এই তিনভাগে উদ্যোক্তাদের বিভক্ত করা হয়েছে। উৎপাদনস্থল ভাড়া নেয়া হলে তা সবার ক্ষেত্রেই ভ্যাটমুক্ত। বাকি থাকে ট্রেডিং এবং সেবা প্রদান।
কাস্টমস আইনের অধীন জেনারেল রুলস ফর ইন্টারপ্রিটেশন (জিআইআর) এ এমন একটা বিধান রয়েছে যে, কোনো পণ্যের বেশিরভাগ অংশ যদি কোনো এক প্রকৃতির হয়, তাহলে সেই পণ্যটা সেই প্রকৃতি অনুসারে শ্রেণীবিন্যাস করতে হবে। ধরুন, একটা কাপড়ের ৭০% কটন আর ৩০% সিনথেটিক।
এই কাপড়কে কটনের তৈরি বলে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে একটা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ অংশের মালিকানা যদি নারীর হয়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানকে নারী উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, নারী উদ্যোক্তার শুধুমাত্র ব্যবসার শো-রুমের ভাড়ার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। সেবাপ্রদানস্থলে ভ্যাট মওকুফ প্রযোজ্য হবে না। আমার মতে, এ ধরনের বক্তব্য সঠিক নয়। আমার মতে, এখানে “ব্যবসা” এবং “শো-রুম” শব্দসমূহ সাধারণ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ভ্যাট আইনে শো-রুমের সংজ্ঞা নেই।
তাই, “শো-রুম” সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হবে। তবে, আমাদের দেশের ভ্যাট ব্যবস্থায় সেবার ক্ষেত্রেও শো-রুম হতে পারে। “তৈরি পোশাক বিপণন” হলো একটা সেবা। এই সেবার সংজ্ঞায় উল্লেখ রয়েছে যে, নিজস্ব শো-রুম থেকে বিক্রি করা।
অর্থাৎ সেবার ক্ষেত্রেও শো-রুম হতে পারে। শো-রুম এর সাধারণ অর্থ হলে যেখানে কোনো কিছু প্রদর্শণ করা হয় এবং বিক্রি করা হয়। তাই, ব্যবসার শো-রুম বলতে এখানে ট্রেডিং এবং সেবা প্রদান উভয়কে বোঝানো হয়েছে বলে আমার অভিমত।
লেজিসলেটিভ ইনটেনশন বলে একটা কথা আছে। এই বিধান মূলত পশ্চাৎপদ নারীদেরকে সুবিধা দেয়ার জন্য। যদি শুধুমাত্র শতভাগ নারীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা না পায়, এবং নারীর শতভাগ মালিকানার শো-রুম ছাড়া এই সুবিধা না পায়, তাহলে এই সুবিধা সীমিত হয়ে যায়।
কারণ, শতভাগ নারীর মালিকানায় কম প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে। সেবা প্রদানকারী বাদ দিলে এমন প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা কোনো সুবিধা হবে না যা ভোগ করার মতো মানুষ পাওয়া যায় না।
লেজিসলেটিভ ইনটেনশন এমন হতে পারে না। যদি ৫০% এর বেশি অংশ নারীর মালিকানায় হলে বাড়ি ভাড়া মওকুফের সুবিধা দেয়া হয়, তাহলে পুরূষেরা নারীর সাথে অংশীদারী কারবার স্থাপন করতে উৎসাহী হবেন। এতে নারীর ক্ষমতায়ন হবে।
লেজিসলেটিভ ইনটেনশন সম্ভবত এমন পারে। নারী উদ্যোক্তাগণ সাধারণত বিউটি পার্লার, বুটিক শপ, পোষাক, হস্তশিল্প ইত্যাদি কাজের সাথে জড়িত। এগুলো ট্রেডিং এবং সেবা প্রদান উভয় ধরনের হয়ে থাকে।
তাই, নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত ব্যবসার শো-রুম বলতে ট্রেডিং প্লেস এবং সেবা প্রদানের স্থান উভয়কে বোঝাবে এবং ৫০% এর বেশি অংশ নারীর মালিকানাধীন হলে সেই প্রতিষ্ঠানকে নারী উদ্যোক্তা কর্তৃক পরিচালিত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে বলে আমার অভিমত।
জাতীয় শিল্পনীতি, ২০২২ এ এমন একটা বিধান আছে যে, নারীর মালিকানা ৫১ শতাংশ হলেই তাঁকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
জাতীয় শিল্পনীতি, ২০২২ এর অনুচ্ছেদ ৩.৪ মোতাবেক “যদি কোন নারী ব্যক্তিমালিকানাধীন বা প্রোপ্রাইটরী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারী বা প্রোপ্রাইটর হন কিম্বা অংশীদারী প্রতিষ্ঠান বা জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ার হোল্ডারগণের মধ্যে অন্যূন (ন্যূনতম) ৫১% (শতকরা একান্ন ভাগ) অংশের মালিক হন তাহলে তিনি নারী শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে পরিগণিত হবেন।”
জাতীয় শিল্পনীতির উক্তরূপ বিধানের ফলে আর কোনো অস্পষ্টতা থাকে না। তাই, কোনো ট্রেডিং বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে নারীর মালিকানা যদি ৫১% বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তিনি নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং সেই স্থান ভাড়া নেয়া হলে ভাড়ার ওপর ভ্যাট প্রযোজ্য হবে না। তবে, এ বিষয়ে রেগুলেটরী এজেন্সী যদি অন্যবিধ ব্যাখ্যা বা মতামত প্রদান করে তাহলে তা প্রাধান্য পাবে।
DR. MD. ABDUR ROUF is a VAT Specialist and Trainer. He has about 27 years experience in the VAT management of Bangladesh. He is a regular trainer of International VAT Training Institute and Bangladesh VAT Professionals Forum (VAT Forum).
এখানে উল্লেখিত কোনো কিছু যদি সরকারের ইস্যূকৃত আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ এর সাথে সাংঘর্ষিক হয়, সেই ক্ষেত্রে উক্ত ইস্যূকৃত আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ-ই প্রাধান্য পাবে।