যোগানদারকে চিনতে হলে মূলত যোগানদার এবং ব্যবসায়ী (ট্রেডার) এর মধ্যে পার্থক্য কী তা বোঝা দরকার এবং যোগানদারের কিছু বৈশিষ্ট্য বোঝা দরকার। ব্যবসায়ী এবং যোগানদারের মধ্যে প্রথম পার্থক্য হলো, ব্যবসায়ীর একটা নির্দিষ্ট স্থাপনা থাকে। তার দোকান থাকে, সাইনবোর্ড থাকে, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে, কর্মচারী থাকে, পণ্য পরিবহণের জন্য কাভার্ড ভ্যাট ইত্যাদি থাকে। যোগানদারের সাধারণত এমন কোনো স্থাপনা এবং স্থাপনা সংশ্লিষ্ট এই আইটেমগুলো থাকে না।
তাহলে যোগানদারের কী থাকে? যোগানদারের কাজ শুরু করার জন্য কিছু ডকুমেন্ট দরকার হয়। যোগানদার একটা ঠিকানা ব্যবহার করে উক্ত ডকুমেন্টস যথা: ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন, বিআইএন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় দলিলাদি প্রস্তুত করে থাকেন। ওই ঠিকানায় হয়তো তার কিছুই নেই।
সেটা হয়তো তার বন্ধুর বাসার ঠিকানা বা অন্য কোনো ঠিকানা যেখানে তার নিজস্ব কিছু নেই। অবশ্য যোগানদার যখন বড় হয়ে যায় তখন অফিস নেয়, অফিসে সরঞ্জাম, ম্যানপাওয়ার ইত্যাদি থাকে। অর্থাৎ যোগানদার বড় হলে তার নির্দিষ্ট স্থাপনা থাকে।
সমাজের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে আমরা যদি যুবকদের ক্যারিয়ার গঠনের গতিবিধি দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, কিছু ব্যক্তি প্রাথমিক কর্মজীবনে অনেক কিছুতে এটেম্পট করে বিফল হয়ে সবশেষে প্রতিষ্ঠিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সহায়তায় সাপ্লাই ব্যবসা শুরু করেন। এইসব ব্যক্তি হলেন যোগানদার।
যোগানদার কোনো পণ্য কিনে মজুদ করে রাখে না। যোগানদার টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে কার্যাদেশ পাওয়ার পর ক্রয় করতে যায়। তাই, বলা হয়ে থাকে যে, যোগানদার বিক্রি করার পর ক্রয় করতে যায়। যোগানদার ক্রয় করার পর মজুদ করে রাখে না, সরাসরি টেন্ডার আহ্বানকারীর অফিসে পৌঁছে দিয়ে আসে।
অপরদিকে, ব্যবসায়ী (ট্রেডার) অর্থাৎ সুপারশপ, শপিং মল, খুচরা বিক্রেতা, পাইকারী বিক্রেতা, ডিলার, ডিষ্ট্রিবিউটর, কমিশন এজেন্ট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর ইত্যাদি পণ্য কিনে এনে নিজ স্থাপনায় মজুদ করে রাখে, সেখান থেকে বিক্রি করে। অর্থাৎ ব্যবসায়ী পণ্য কিনে মজুদ করে আস্তে আস্তে বিক্রি করে। আর যোগানদার পণ্য কিনে সরাসরি সরবরাহ দিয়ে আসে।
ব্যবসায়ী সব ধরনের ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করেন। ব্যবসায়ী এক-দুই পিস করে বিক্রি করেন; আবার, একবারে অনেক বেশিও বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীর কাছে কোনো ক্রেতা যে পরিমাণ কিনতে চান, ব্যবসায়ী সে পরিমাণই বিক্রি করেন। ব্যবসায়ী সবার কাছে পণ্য বিক্রি করেন। ব্যবসায়ী দোকান খুলে বসে থাকেন।
দোকানে যিনি কিনতে আসেন, তাঁর কাছেই বিক্রি করেন। কিন্তু যোগানদার এক-দুই পিস করে বিক্রি করেন না। যোগানদার সবার কাছে বিক্রি করেন না। যোগানদার দোকান খুলে বসে থাকেন না। যোগানদার যে সংখ্যক বা পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ পান, ঠিক সেই সংখ্যক বা পরিমাণ পণ্য ক্রয় বা আমদানি করে কার্যাদেশদাতার কাছে সরবরাহ করেন।
ব্যবসায়ী সব টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন না। তাঁর কাছে যে পণ্য মজুদ আছে বা যে পণ্য সাধারণত তিনি বিক্রি করে থাকেন বা যে পণ্য তিনি সহজে কিনে সরবরাহ দিতে পারবেন, সাধারণত সে ধরনের টেন্ডারে ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন। ধরুন, একজন সিমেন্টের ব্যবসায়ী সাধারণত একটা গাড়ি সরবরাহ করার টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন না। কিন্তু যোগানদার সব ধরনের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন।
যোগানদার যদি আর্নেষ্ট মানি দিতে পারেন তাহলেই সে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন। যোগানদার কোনো টেন্ডারে কার্যাদেশ পাওয়ার পর সে পণ্য কিনে সরবরাহ করেন। আর যদি টেন্ডারে তিনি বিজয়ী না হন তাহলে আর্নেষ্ট মানি তুলে নিয়ে নেন। এই হলো যোগানদারের কাজের ধরন। আমি আশা করি যে, এই ৪টা টিপস থেকে পাঠকগণ যোগানদার এবং ট্রেডার (ব্যবসায়ী) সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
উৎসে ভ্যাট কর্তন করার ক্ষেত্রে যোগানদার চেনার দরকার খুব বেশি হয়, কারণ মাঠ পর্যায়ে যে সকল ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট কর্তন করা হয়, তার মধ্যে যোগানদারের সংখ্যা এবং পরিমাণ উভয়ই বেশি।
ভিডিএস কর্তন করার ক্ষেত্রে যোগানদার ছাড়াও আমদানিকারক, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী এবং সেবা প্রদানকারীদেরকে চিনতে হয়। আমদানিকারক চেনা সহজ। সব ডকুমেন্টে ইমপোর্টার লেখা থাকে, বিল-অব-এন্ট্রি থাকে। উৎপাদনকারী চেনাও সহজ। সব ডকুমেন্টে ম্যানুফ্যাকচারার লেখা থাকে। তাছাড়া, উৎপাদন স্থান খুব দৃশ্যমান থাকে।
ভিডিএস কর্তনকারীকে প্রতিটি বিলের ক্ষেত্রে এভাবে সরবরাহকারীকে চিনতে হয় না। উৎসে কর্তনকারীর কাছে যারা সরবরাহ করে, তাদের তালিকা থাকে। যখন সরবরাহকারীকে তালিকাভুক্ত করা হয়, তখনই বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নেয়া যায়। সরবরাহকারীর ব্যবসায়ের প্রকৃতি কি তা তার ট্রেড লাইসেন্সে উল্লেখ থাকে। তার প্যাডে উল্লেখ থাকে।
সর্বোপরি, তার ঠিকানায় গমন করে সরেজমিনে দেখে আসা যায় যে, তার ব্যবসার প্রকৃতি কি। উৎসে কর্তনকারীকে প্রথমত বুঝতে হয় যে তিনি যার কাছ থেকে সরবরাহ নিয়েছেন তিনি কি আমদানিকারক, নাকি, উৎপাদনকারী, নাকি ব্যবসায়ী, নাকি যোগানদার, নাকি অন্য কোনো সেবা প্রদানকারী।
DR. MD. ABDUR ROUF is a VAT Specialist and Trainer. He has about 27 years experience in the VAT management of Bangladesh. He is a regular trainer of International VAT Training Institute and Bangladesh VAT Professionals Forum (VAT Forum).
এখানে উল্লেখিত কোনো কিছু যদি সরকারের ইস্যূকৃত আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ এর সাথে সাংঘর্ষিক হয়, সেই ক্ষেত্রে উক্ত ইস্যূকৃত আইন, বিধি, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ-ই প্রাধান্য পাবে।